একদল ডান ও বাম মনে করছেন, তাঁরা পিআর–ব্যবস্থায় ন্যূনতম আসন পাবেন, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতিতে) একটা আসন পাওয়াও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আনুপাতিক নির্বাচনে সংসদে আসন পেতে ন্যূনতম একটি ভোট পাওয়া লাগে, বিভিন্ন দেশে এটা ৩ শতাংশ। ইউরোপের কিছু দেশে এই নীতির ফলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান লক্ষণীয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অধিকাংশ বাম দল ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অপরাপর ইসলামি দলের পক্ষে আনুপাতিক হিসাবেও সংসদে আসন পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা, ঐতিহাসিকভাবে তারা কখনো জাতীয় পর্যায়ে ১ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি।
উপরন্তু, গণ-অভ্যুত্থানের পরে জুলাই-আগস্টে ছাত্র–জনতাকে হত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয় আছে। যেহেতু জনপরিসরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব অনুপস্থিত, আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এত দিন বিরোধিতা করে এলেও এখন আনুপাতিক নির্বাচন চাইছেন মূলত দলটিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চিন্তা থেকে। বাস্তবেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ। তবে পিআর আলোচনা এগিয়ে গেলে রাজনৈতিক ও সরকারি সিদ্ধান্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিও প্রবল হবে।
বস্তুত জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ (সিনেট), নিম্নকক্ষ (অ্যাসেমব্লি হাউস) এবং স্বাধীন স্থানীয় সরকার গড়া গেলেই পরে সরকারব্যবস্থার অন্তত একটি বা দুটি স্তরকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচনে নেওয়া যায়। শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ও নগর করা গেলে পরে জাতীয় সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের গঠনগত আলোচনা প্রাসঙ্গিক হবে। সেখানে আনুপাতিক নির্বাচন, বিশেষজ্ঞ বা পেশাজীবী প্রতিনিধিত্ব, নারী আসন, সংখ্যালঘু ধর্ম–জাতি–উপজাতি–প্রতিবন্ধী ইত্যাদি এবং আঞ্চলিক মেরিটোক্রেটিক প্রতিনিধি নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া প্রাসঙ্গিক হবে।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য চলমান সংস্কার আলোচনার কেন্দ্রে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সংসদে কারা যাবেন, সেটা পুরোপুরি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল করা যাবে না। তাই পিআর নির্বাচনপদ্ধতি প্রয়োগের সঠিক শাসনতান্ত্রিক মডেল এবং আধুনিক পিআর–ব্যবস্থার গুণগত বিবেচনা দরকার। এ জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং সেমতে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সাজাতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়া, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গড়া, যা একটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হবে—চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরে কাজটা না করলে কবে করবে বাংলাদেশ?