১৯৫২ সালে ২৫ বছর বয়সী যুবক মাহবুব উল আলম ছিলেন চট্টগ্রামের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদেরও আনাগোনা ছিল তাঁর বাসায়। কবিতাটি রচনার পরপরই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস তাঁর বাসায় আসেন। একুশের প্রথম কবিতার পাঠক হওয়ার সৌভাগ্য হয় তাঁর। ২২ ফেব্রুয়ারি ইলিয়াস কবিতাটি ছাপার জন্য কোহিনূর প্রেসে নিয়ে যান। ছাপাখানাটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবদুল খালেক ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সমর্থক। তাই এমন একটি বিস্ফোরক কবিতা ছাপার ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেননি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১/৮ ডিমাই আকারের আট পৃষ্ঠার পুস্তিকায় ছাপা হবে কবিতাটি। প্রকাশক হবেন কামাল উদ্দিন আহমদ বি.এ। ছাপা হবে পাঁচ হাজার কপি। দাম দুই আনা। রাতে ছাপার কাজ চলার সময় তৎকালীন পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ হানা দেয় প্রেসে। তখন ছাপাখানার কর্মীরা ভাষা আন্দোলনের সংগঠক ইলিয়াসকে গোপন স্থানে লুকিয়ে ফেলেন। সরিয়ে ফেলেন কবিতার সব কম্পোজ কপি। তাই পুলিশ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পায়নি।
ছাপা হয়ে বইটি বের হওয়ার পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি লালদীঘির প্রতিবাদ সভায় কবিতাটি পাঠ করেন চৌধুরী হারুনর রশীদ। আর সেদিনই পাকিস্তান সরকার কবিতাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী, চৌধুরী হারুনর রশীদ, প্রকাশক কামাল উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গ্রেপ্তার হন চৌধুরী হারুনর রশীদ ও প্রেস ম্যানেজার দবির আহমদ চৌধুরী। প্রায় আট মাস কারাভোগের পর ২৩ অক্টোবর খালাস পান তাঁরা।
নিষেধাজ্ঞার ফলে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় একসময় কবিতাটি হারিয়েই যায়। ১৯৮২ সালে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কবির স্মৃতি থেকে কবিতাটি উদ্ধারের চেষ্টা করেন এবং উদ্ধার করা অংশটুকু তাঁর ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনার বইতে ছাপেন। এর কয়েক বছর পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে একুশের প্রথম কবিতাটি হারিয়ে যাওয়ার কথা জানান কবি মাহবুব উল আলম।