অঞ্জন দত্ত কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আর একটি মাত্র নাটক নির্দেশনা করবেন। তারপর থেকে অঞ্জন দত্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নানা মত।
জীবনের শেষ নাটকের জন্য অঞ্জন উইলিয়াম শেক্সপিয়রের শরণাপন্ন হয়েছেন। ব্রিটিশ নাট্যকারের ‘কিং লিয়র’কে সমকালীন প্রেক্ষাপটে পুনর্নির্মাণ করেছেন অঞ্জন। নাম দিয়েছেন ‘আরো একটা লিয়র’।
চলতি বছরেই তার পরিচালিত ও অভিনীত ‘চালচিত্র এখন’ সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয়েছে, এনেছে একাধিক পুরস্কার। ছবিটির মতো এ নাটকটিও অঞ্জন নিজেই প্রযোজনা করছেন। অঞ্জন তার নাটকে অন্ধকার একটি জগৎকে তুলে ধরতে চাইছেন। সেই মতো পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ছন্দা দত্ত। কিং লিয়রের মেয়েদের চরিত্রে রয়েছেন যথাক্রমে সুদীপা বসু, কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্লস্টারের চরিত্রে রয়েছেন লোকনাথ দে ও কেন্টের চরিত্রে রয়েছেন সুপ্রভাত দাস। এডমন্ডের চরিত্রে রয়েছেন শুভ্র সৌরভ দাস। নাটকের সঙ্গীতের মধ্যেও থাকছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
অঞ্জন শুরু থেকে থিয়েটারে অভিনয়ের ক্ষেত্রে শরীরী ভাষা ও বয়স অনুযায়ী চরিত্র নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। অঞ্জনের বয়স এখন ৭১ বছর। তাই তার মতে, এরপর তিনি আর নাটকে অভিনয় করতে পারবেন না। অঞ্জনের কথায়, এক সময়ে বাদল সরকার আমাকে তৈরি করেছিলেন। ‘গ্যালিলিও’ যখন করেছি, তখন আমি মধ্য-পঞ্চাশে। কিন্তু এবার রিহার্সাল করতে গিয়ে বুঝেছি, এরপর আর মঞ্চে অভিনয় করতে পারব না।
কিন্তু শেষ নাটক হিসেবে ‘কিং লিয়র’কেই বা কেন বেছে নিলেন অঞ্জন, তার নেপথ্যেও যুক্তি রয়েছে তার। বললেন, ব্রেখট ও রবীন্দ্রনাথের নাটক করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শেক্সপিয়র করিনি। আর শেষ নাটক হলে ‘কিং লিয়র’-এর কোনও বিকল্প নেই।
নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন অঞ্জন। তার মতে, কেউ কেউ শুধুই নির্দেশক হন। কিন্তু তিনি মূলত একজন অভিনেতা বলেই এ নাটকে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার যুক্তি, ‘ম্যাডলি বাঙালি’ থেকে ছবিতে ঢুকে পড়লাম। তারপর আমার সিংহভাগ ছবিতেই কিন্তু আমি কোনও না কোনও ভাবে ঢুকে পড়েছি। অর্থাৎ অভিনয় ছাড়া আমি দেখছি নতুন কিছু তৈরি করতে পারছি না। কিন্তু আগামীদিনে অভিনয় না করে ছবি পরিচালনা করলেও করতে পারেন বলে জানালেন অঞ্জন।
সারা বিশ্বে চর্চিত এ নাটকটিকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে মঞ্চস্থ করা হয়েছে। তবে অঞ্জন জানালেন, পাশ্চাত্যের তুলনায় তিনি এক্ষেত্রে প্রাচ্যের শেক্সপিয়র আত্তীকরণের ওপরে বেশি জোর দিয়েছেন। অঞ্জন বললেন, ‘এক সময়ে হিংসার কারণে পাশ্চাত্যে নাটকটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিং লিয়র কিন্তু বোকা রাজা নয়! আমি জাপান ও রাশিয়ার ইন্টারপ্রিটেশন অনুসরণ করে লিখেছি। ’ ‘কিং লিয়র’ রাজনৈতিক নাটক। লিয়রকে অঞ্জন দুর্নীতিগ্রস্ত ভোগবাদী সমাজের প্রতীক হিসেবেই দেখতে চাইছেন। বললেন, ‘এটা তো সমকালীন সমস্যা। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা মানেই দুর্নীতি। চারিদিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। ’
বাঙালি নাট্যপ্রেমীদের কাছে কিং লিয়র হিসেবে এখনও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় উজ্জ্বল। সেখানে কোনও রকম তুলনায় যেতে রাজি নন অঞ্জন। তার যুক্তি, আগেই বলেছি, আমার নাটকটাই আলাদা। আমার লিয়র তো বদ্ধ উন্মাদ এবং বদমায়েশ এক চরিত্র, তাই তুলনা করার অবকাশ কম। তবুও দর্শক যদি তুলনা করেন, সেটা তাদের বিষয়। অঞ্জন জানালেন, আগামী কয়েক মাসে ‘আরো একটা লিয়র’-এর বেশ কয়েকটি শো মঞ্চস্থ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।