ফরিদপুর: ফরিদপুরের কুমার নদে অসময়ে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে নদের পাড়ের ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
এদের মধ্যে বহু পরিবার আছে যারা দুবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নদের পাড়ে ফের বাড়ি করছেন। কেউবা সরকারের রেলের জায়গা নদের তীরে বাড়ি করে একটু ঘুমানোর শেষ আশ্রয়স্থল তৈরি করছেন।
অথচ তাও কুমার নদের অসময়ের অব্যাহত তীব্র ভাঙনে হাজারখানেক নদের পাড়ের পরিবার মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন বাড়িঘর কুমার নদের তীর ভাঙনে বড় বড় মাটির চাপ বসতভিটার তলদেশের অংশসহ দুমড়ে-মুচড়ে নদের বুকে আছড়ে পড়ছে।
ইতোমধ্যে, ফরিদপুর শহরের চুনঘাটা ব্রিজ সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিমাংশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ নদী ভাঙনে ৫০-৬০টি পরিবারের বাড়িঘর, ফসলি জমি, ফলদ গাছপালা নদের বুকে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন কুমার নদের পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। নদী ভাঙন একবারেই বিধ্বংসী হয়ে পড়েছে। অসময়ে তীব্র নদীভাঙন এখন অসময়ের বড় দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড়ে বাড়িঘর উড়ে গেলেও নিজের ভিটা গাছপালা কিছু হলেও থাকে। কিন্তু নদীভাঙনে ভিটে-মাটি, ফসলি জমি, গাছপালা সব কিছু কেঁড়ে নিয়ে যায়।
বন্যায় ফসল ভেসে গেলেও জমিটুক থাকে। বাড়িঘর পুড়ে গেলে ছাইটুক থাকে। কিন্তু নদী ভাঙনে সবটুকু শেষ হয়ে অবশিষ্ট আর কিছুই থাকে না। নদী ভাঙনে সকাল বেলার বাদশা সন্ধ্যা বেলায় একেবারে নিঃস্ব ফকির হয়ে যায়। মোটকথা সদর উপজেলার ৭-৮ নম্বর ওয়ার্ড দুটির কুমার নদের দুপাড়ে যে সব বসতি আছে তাদের বাড়িঘর কোনো রকমেই রক্ষা হচ্ছে না।
ভাঙনের বিষয়ে মো. জিহাদ হোসেন জাহিদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকে ভাঙন শুরু হলেও গত একমাস ধরে পরিমাণ একটু বাড়লেও গত এক সপ্তাহে ভাঙনের তীব্রতা এমনভাবে বেড়েছে যা হঠাৎ করে দেখেই আঁতকে উঠছেন যে কেউই।
এ বিষয়ে মো. আক্কাস আলী নামে অপর আরেক ব্যক্তি বলেন, গত ৭২ ঘণ্টায় কুমার নদের পৌরসভার ৮-৯ নম্বর ওয়ার্ডের চুনাঘাটা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ব্রিজের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের নদীর উভয় পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নদে সামান্য পানি থাকায় এই ভাঙন দেখা না গেলেও, এখন নদে পানি শূন্য হয়ে পড়ায় নদীভাঙন দৃশ্যমান হয়ে পড়ছে। দৃশ্যমান হয়ে উঠছে নদের দুপাড়ের তীব্র ভাঙনের ভয়াবহতা।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সরেজমিনে ৯ ওয়ার্ডের মদনখালী রেগুলেটর থেকে নদের পাড় দিয়ে হেঁটে কুমার নদের ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবেদনকালে এই তীব্র ভাঙনের ভয়াবহতা দেখা যায়।
এ সময় কথা হয় দলিল লেখক মো. সাইফুল ইসলাম, দলিল লেখক মো. ফরিদ জমিদারের সাথে।
তারা বলেন, হঠাৎ কুমার নদ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে আরও শত শত বাড়িঘর কুমার নদে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নদীভাঙন ঠেকাতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২৪
এসআরএস